চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে লন্ডনের ঐতিহাসিক ‘ইন্ডিয়া ক্লাব’

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কালীন লন্ডনের ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া ক্লাবটি একসময় জাতীয়তাবাদীদের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের গোড়াপত্তন হয়েছিল এই ক্লাবটিতেই; আর তাই তৎকালীন সময়ে ক্লাবটি বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। এবারে ঐতিহাসিক এ ক্লাবটি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। আর এর মধ্যদিয়ে চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নানা ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী ‘ইন্ডিয়া ক্লাব’।

রেস্তোরাঁটি ভেঙে ফেলতে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কারণ সেখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল নির্মাণের জন্য রেস্তোরাঁ একাংশ ভেঙে ফেলতে ওয়েস্টমিনস্টার সিটি কাউন্সিলে আবেদন করে রেস্তোরাঁর জমির মালিক মারস্টন প্রপার্টিজ। 

সে সময় লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত ওই রেস্তোরাঁটির গুরুত্ব অনুধাবন করে আবেদনটি খারিজও করে দেয় কাউন্সিল। ফলে প্রাথমিক জয়ের মালা রেস্তোরাঁর মালিক ইয়ডগার মার্কার ও তার মেয়ে ফিরোজার গলায় ওঠে। আর তাদের ‘সেভ ইন্ডিয়া ক্লাব’ উদ্যোগটিও সফলতার মুখ দেখে। কিন্তু এবার আর শেষরক্ষা হলো না। কারণ জমির মালিক মারস্টন প্রপার্টিজ নোটিশে জানিয়ে দিয়েছে, রেস্তোরাঁ খালি করে দিতে হবে। 

আর এর মধ্যদিয়ে বৃটেনে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত পদ অলঙ্কৃত করা কৃষ্ণ মেননসহ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান লন্ডনের ইন্ডিয়া ক্লাবটি সেপ্টেম্বর থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘’অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা ইন্ডিয়া ক্লাব বন্ধের কথা ঘোষণা করছি, এটি ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ''

ইন্ডিয়া ক্লাবের শেকড় পোঁতা রয়েছে মূলত ইন্ডিয়া লীগের সঙ্গে কেননা বৃটেনে ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রচার চালিয়েছিল এই ইন্ডিয়া লীগ। এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কৃষ্ণ মেনন- যিনি যুক্তরাজ্যে প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনার হয়েছিলেন। 

যুক্তরাজ্যের প্রথম দিকের ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়া ক্লাব ভারতের স্বাধীনতা এবং দেশভাগের পরে দ্রুত বর্ধমান বৃটিশ দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি আড্ডা কেন্দ্রে পরিণত হয়।

ফিরোজা, যিনি  ছোটবেলা থেকেই এই ক্লাবে তার বাবাকে সাহায্য করে আসছেন তিনি এ বিষয়ে বলেন, ''৭০ বছরেরও বেশি সময় আগে এটি শুরু হওয়ার পর থেকে, ইন্ডিয়া ক্লাব ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের জন্য ইন্দো-বৃটিশ সম্প্রদায়ের একটি স্বতন্ত্র কমিউনিটি হয়ে ওঠেছে। ''

অন্যদিকে স্কুল অফ ওরিয়েন্টালের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডায়াস্পোরা স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার পার্বতী রমন বলছেন ''মেনন ইন্ডিয়া ক্লাবকে এমন এক জায়গা হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন যেন সেখানে তরুণ ভারতীয়রা খাওয়ার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন।'' 

২৬ কক্ষবিশিষ্ট স্ট্র্যান্ড কন্টিনেন্টাল হোটেলের প্রথম তলায় অবস্থিত এ ক্লাবটি ১৯৪৬ সাল থেকে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ হিসেবে পরিষেবা দিয়ে আসছে। এখানে কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয় ভারতীয় খাবার বাটার চিকেন এবং মাসালা দোসা পরিবেশিত হয়ে আসছে। 

লন্ডনে এশিয়ানদের কাছে এক অনন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে। 

এদিকে 'ইন্ডিয়া ক্লাব' বন্ধ হচ্ছে শুনে ভারতের প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ঐতিহাসিক স্থানটির সাথে তার সাংবাদিক পিতা চন্দ্রন থারুরের সংযোগের স্মৃতিচারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেন, ''অনেক ছাত্র, সাংবাদিক এবং ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি বাড়ি থেকে দূরে আরেকটি বাড়ির মতোই ছিলো। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ এবং ভাল মানের ভারতীয় খাবারের পাশাপাশি নতুন নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার একটি  আনন্দঘন পরিবেশ ছিলো।''

সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //